আজিজুর রহমান রাজু:
গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঈদগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘স্থানীয় সেবা খাতে নাগরিক পরিবীক্ষণ ও প্রাপ্ত সেবা তথ্য নিয়ে মতবিনিময় সভা’। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবায় টেকসই পরিবর্তন আনতে নাগরিক, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগের ওপর সভায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১১টায় শাহ ফকিরা বাজারস্থ আলম মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ভয়েস ফর চেইঞ্জ প্রকল্পের আওতায় নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে এবং খান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদা ইয়াসমিন এবং পালস্ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম।
নাগরিক ফোরামের সদস্য সচিব সাংবাদিক আজিজুর রহমান রাজুর সঞ্চালনায় ও সভাপতি নাঈমুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক হলো গ্রামের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। তবে জনবল ঘাটতি, ওষুধ সংকট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সেবার মান প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায় না। শুধু সমস্যা চিহ্নিত করাই নয়, প্রশাসন ও জনগণের মাঝে কার্যকর সেতুবন্ধন তৈরি করাটাও অত্যন্ত জরুরি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা বলেন, নাগরিকরা সেবার মান ও জবাবদিহিতা বিষয়ে সচেতন থাকলে প্রশাসন আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে। সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগ সফল করতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ওসি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের মৌলিক অধিকার। আইন–শৃঙ্খলা ও সামাজিক সহযোগিতা ছাড়া কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম সফল হয় না। ক্লিনিক, জনগণ ও প্রশাসনের সমন্বয় সেবাকে আরও গতিশীল করবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রোকসানা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রথম ধাপ। সেবাদানকারীদের পাশাপাশি নাগরিক সহযোগিতাও প্রয়োজন। সভায় উপস্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
পালস্ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সেবাই মানসম্মত হয় না। নাগরিক পর্যবেক্ষণ গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ তৈরি করবে।
সভায় নাগরিকদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ছিল প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে দৃশ্যমান স্থানে সিটিজেন চার্টার টানানো, নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা, প্রতিটি ইউনিয়নে মিনি অ্যাম্বুলেন্স বা জরুরি পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা, গর্ভবতী নারীদের জন্য ANC–PNC সেবা জোরদার করা, সপ্তাহে অন্তত দুই দিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও সচেতনতা সভা বৃদ্ধি করা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পালস্ বাংলাদেশের লিয়াজোঁ অফিসার মাহবুবুর রহমান, খান ফাউন্ডেশনের জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবু ছালাম, প্রজেক্ট অফিসার সারমিন সুলতানা, বেদনা খাতুন, জিএসবি গ্রুপের সভাপতি সাহাব উদ্দিন, ইসলামাবাদ মহিলা মেম্বার সেলিনা আক্তারসহ নাগরিক ফোরামের অন্যান্য সদস্য।
তেতুলতলী কমিউনিটি ক্লিনিকের আওতাধীন ইসলামাবাদ ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন পেশার প্রায় শতাধিক মানুষ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
